গাঁজা-ইন্ডাস্ট্রির অন্তর্জগৎ: স্তরভেদে গভীর বিশ্লেষণ
স্তর ১: সীমান্তের শিকড় — চাষি নয়, ছায়া চাষ করায়
- পাহাড়ি অঞ্চল ও সীমান্তে গাঁজা চাষ হয় ‘নিরাপত্তাহীন এলাকায়’, যেখানে প্রশাসনের উপস্থিতি দুর্বল বা নিয়ন্ত্রিত।
- গাঁজা চাষের জন্য ব্যবহার করা হয়:
- অসচেতন দরিদ্র কৃষক
- জমি হস্তান্তরের ভুয়া কাগজে দখলকারী দল
- জঙ্গলের ভেতরে মোবাইল টাওয়ার-বিহীন এলাকা
গাঁজা চাষের রেট: প্রতি ১০ বিঘায় প্রায় ৫০ কেজি গাঁজা ফলে, যা কাঁচামালে প্রায় ১ লাখ টাকার ওপরে বিক্রি হয়।
অথচ চাষিকে দেওয়া হয় সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকা।
স্তর ২: ‘সীমান্তদূত’ — পোর্টার নয়, নেটওয়ার্ক অফিসার
- যারা মাল নিয়ে সীমান্ত পাড় হয় তারা কখনও ১২–১৬ বছরের কিশোর, কখনও অবসরপ্রাপ্ত সামরিক সদস্যের পরিচয়ধারী কেউ।
- সীমান্তে “মাল পাস” করাতে নিয়মিত যোগাযোগ থাকে:
- সীমান্ত এলাকার কিছু বিজিবি সদস্য
- লোকাল থানা-পুলিশ
- গ্রাম্য জনপ্রতিনিধি
এক বিজিবি সদস্য (নাম গোপন) বলেন,
“গাঁজা আসে ঠিকই, কিন্তু উপর মহলের ফোনে কখন হাত দিই আর কখন চুপ থাকি, সেটা আমরা ঠিক করি না।”
স্তর ৩: শহরের ফ্যাশন — ধোঁয়ার মোড়কে বিজনেস ক্লাস
- শহরে ঢোকার পর গাঁজা ছোট ছোট ইউনিটে ভাগ হয়ে চলে যায়:
- প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি এলাকা
- কফিশপ-ভিত্তিক গ্যাং হ্যাংআউট
- স্টুডিও, ডিজাইনার হাউজ, মিডিয়া ও র্যাপার সার্কেল
“ওটা তো আর গাঁজা না ভাই, মেডিটেশন। ডিজাইন করতে হলে একটু ধোঁয়া লাগে।” — এক তরুণ ডিজাইনারের বক্তব্য
তাদের হাতে থাকে “Smell-proof Packets”, সুন্দর লোগো, আর স্লোগান:
“Smoke Smart, Think Free.”
স্তর ৪: ম্যানেজমেন্ট — ধোঁয়ার ওপরে রাজনীতি
এখানে থাকে তিন ধরনের মুখ:
- ‘লোকাল প্রটেক্টর’ — থানা ওসির সোর্স, একেকটা এলাকায় তাদের নিয়ন্ত্রণ
- ‘অর্গানাইজার’ — মাদক ব্যবসার পুরনো খেলোয়াড়, এখন রাজনীতির ছত্রছায়ায়
- ‘স্মার্ট মুখপাত্র’ — যিনি মিডিয়ায় সচেতনতার পোস্ট দেন, আর ভেতরে থাকেন নেটওয়ার্ক প্ল্যানার
এদের কাজ:
- দ্রুত ধরার পর ছেড়ে দেওয়ার ব্যবস্থা
- বড় চালান ধরার আগে ‘ফাঁসানো চালান’ ছেড়ে দিয়ে খবর দেওয়া
- নতুন তরুণ রিক্রুটমেন্ট — স্লিপার এজেন্ট হিসেবে কলেজ-ইউনিভার্সিটি থেকে
স্তর ৫: অর্থপাচার ও লন্ডারিং — ধোঁয়া থেকে সোনার চেইন
গাঁজা থেকে উপার্জিত টাকা যায় ৩টা পথে:
- লোকাল ব্যবসায় খাটানো: মোটরসাইকেল শো-রুম, রেস্টুরেন্ট, গেম জোন, শো-রুম
- অনলাইন ফাইন্যান্সিং: ক্রিপ্টোকারেন্সি এক্সচেঞ্জ ও প্রাইভেট ওয়ালেট
- বিদেশে পাঠানো: হুন্ডি, গিফট কার্ড, নকল ইনভয়েস সিস্টেম
একসময় গাঁজা ছিল শুধু নেশা। এখন এটা নগদ টাকার শেয়ার মার্কেট — যার কোনো হিসাব নেই, কিন্তু সব জানে প্রশাসনের কেউ না কেউ।
শেষ কথা: গাঁজা বিক্রি নয়, বিক্রি হচ্ছে ভবিষ্যৎ
এই ইন্ডাস্ট্রির পিছনে শুধু ধোঁয়া নেই, আছে:
- শিল্পের মত কাঠামো
- রাজনীতির মত জটিলতা
- আর্থিক জগতের মত গতিশীলতা
- আর সবচেয়ে ভয়ংকর: “সবাই জানে, কিন্তু কেউ কিছু বলে না — কারণ ধোঁয়ার আড়ালে সবই ম্যানেজড।”
[সিরিজ পর্ব ৭ আসছে: “তরুণদের নিশ্বাসে আগুন কেন?” — গাঁজা-সেবনের পিছনের মানসিক ও সামাজিক কারণ]