“গাঁজা-ইন্ডাস্ট্রি: কারা চালায়, কিভাবে চলে?”
সিরিজ: অন্ধকারে আলোর খোঁজ (পর্ব ৬)
লেখা: Sick Monsters টিম
“পাড়ার ছেলেটা গাঁজা বিক্রি করে, কিন্তু মালটা আসে মাইল পেরিয়ে।
কেউ তো চাষ করে, কেউ তো পাস করায়, আর কেউ তো জানে — কে পুলিশকে ফোন দেয় আগে!”
এটা একটা ইন্ডাস্ট্রি।
আকারে অপরাধ, কিন্তু কাঠামোতে একটা কোম্পানির চেয়েও সংগঠিত।
১. চাষ — উৎসের গোড়ায়
বাংলাদেশে গাঁজার বড় উৎস নয়, কিন্তু সীমান্ত লাগোয়া এলাকায় চাষ হয়:
- মায়ানমার ও ভারতের কিছু অঞ্চল গাঁজা চাষের ‘হট জোন’
- স্থানীয় কিছু আদিবাসী বা দরিদ্র কৃষককে দিয়ে গোপনে চাষ করানো হয়
- এইসব জায়গায় চাষিরা মাত্র ৫-১০% দাম পায়, বাকি দামে ব্যবসা হয় শহরে
“চাষি জানে গাছ, কিন্তু জানে না তার ধোঁয়ার দাম কত শহরে।”
২. ট্রানজিট — সীমান্তের ছায়া পথ
চোরাচালান হয় তিনটা প্রধান রুট দিয়ে:
- বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত (মেঘালয়, ত্রিপুরা, আসাম)
- মায়ানমার সীমান্ত (বান্দরবান, রুমা, নাইক্ষ্যংছড়ি)
- নদী ও পাহাড়ি দুর্গম অঞ্চল
কাজ করে লোকাল পোর্টার, পুলিশের সোর্স, কাস্টমস পরিচিতি, এমনকি রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থাকা ছোট নেতারা।
“যদি প্রতিদিন ৫-১০ কেজি ঢোকে, তাহলে মাসে কোটি টাকার ওপরে যায় এই খাতে।”
৩. ডিস্ট্রিবিউশন — শহরের আন্ডারওয়ার্ল্ড
ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী — সব শহরে আছে:
- লোকাল ডিলার: ছোট প্যাকেটে বিক্রি করে ছাত্রাবাস, ক্যাফে, হোস্টেল, ক্লাব এলাকায়
- মিড-লেভেল লিংক: যারা মাল নেয় বাল্কে, ভাগ করে ডিস্ট্রিবিউট করে
- রক্ষাকারী দলে: কারো কাজ হল খবর দেওয়া, কারো কাজ ‘ম্যানেজ’ করা
এখানে “অফিস টাইম” নেই,
তরুণ টার্গেট, আর ক্যাশ লেনদেন পুরো অফ-রেকর্ড।
৪. আয়-ব্যয়ের চিত্র (প্রায় হিসাব)
ধাপ | খরচ (প্রতি কেজি) | বিক্রয় মূল্য | লাভ |
---|---|---|---|
চাষি দাম | ২,০০০–৪,০০০ টাকা | ||
ট্রানজিট খরচ | ৩,০০০–৫,০০০ টাকা | ||
শহরে বিক্রি | ২৫,০০০–৪০,০০০ টাকা | ৩গুণ–৫গুণ লাভ |
এই লাভের একটা অংশ পুলিশ, রাজনীতি, মিডিয়া পরিচিতি ও মাস্তান ম্যানেজমেন্টে যায়।
৫. কারা চালায়?
- লোকাল ডন
- ছোট রাজনৈতিক নেতা
- সাবেক মাদক কারবারির আত্মীয় বা পরিচিতি
- আশ্চর্যজনকভাবে কিছু ‘সমাজকর্মী’-ও যুক্ত
“মিডিয়ায় যারা ‘মাদকের বিরুদ্ধে’ পোস্ট দেয়,
তাদের কেউ কেউই এই নেটওয়ার্কে ‘স্মার্ট ম্যানেজার’ হিসেবে আছে।”
**এই ইন্ডাস্ট্রি শুধু নেশা চালায় না, চালায় সমাজকে দুর্বল করার এক সাইলেন্ট সিস্টেম।
আর আমরা যদি চুপ থাকি, তাহলে এটাই ভবিষ্যৎ হয়ে দাঁড়ায়।**
[সিরিজ পর্ব ৭ আসছে: “তরুণদের নিশ্বাসে আগুন কেন?” — গাঁজা-সেবনের পিছনের মানসিক ও সামাজিক কারণ]