সিরিজ পর্ব ৭: “তরুণদের নিশ্বাসে আগুন কেন?”
— গাঁজা-সেবনের পিছনের মানসিক ও সামাজিক কারণ
লেখা: Sick Monsters টিম
“ওরা গাঁজা খায় না নেশার জন্য, খায় ভুলে থাকার জন্য।
কারও পরিবার ভেঙে গেছে, কারও স্বপ্ন—
কেউ হারিয়ে গেছে, কেউ বেঁচে আছে মরার মত।”
১. গাঁজা মানে ‘মাদক’ না, অনেকের কাছে মানে — মুক্তি
গবেষণা আর বাস্তব অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে,
তরুণদের একটি বড় অংশ গাঁজা সেবন করে নিম্নলিখিত কারণে:
- আত্মিক চাপ থেকে মুক্তি পেতে (বাবা-মায়ের ঝগড়া, ব্রেকআপ, চাকরির চাপ)
- নিজেকে ‘প্রমাণ’ করার ব্যর্থতা থেকে মুক্তির চেষ্টা
- সমাজের ‘ফিট’ না হওয়া তরুণদের আত্ম-স্বীকৃতি খোঁজা
- সহানুভূতি না পাওয়া মানসিক রোগীদের নিজস্ব চিকিৎসা
এক বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র জানায়:
“গাঁজা না খেলে ঘুমাতে পারি না, ভয় করে। মনে হয় জীবন থেমে গেছে।”
২. গ্যাং কালচার ও ‘মেন্টাল স্টেটাস’-এর প্রতীক
বর্তমান সময়ের মিডিয়া, র্যাপ কালচার, মিউজিক ভিডিও, স্টুডেন্ট গ্যাং —
এইসব জায়গায় গাঁজা অনেক সময় “ক্রিয়েটিভিটি”, “বোল্ডনেস” ও “স্ট্রেস রিলিফ”-এর প্রতীক হিসেবে তুলে ধরা হয়।
- “আমি অন্যরকম” ভাব তৈরি হয় গাঁজা সেবনের মাধ্যমে
- নতুনদের মধ্যে দেখা দেয় একধরনের “ম্যানলি ইমেজ তৈরির চাপ”
“সিগারেট খাচ্ছো? ভাই লেভেল দেইখো। এখানে সব বাজে না।”
৩. মানসিক স্বাস্থ্য উপেক্ষা — চেপে থাকা বিষ্ময় এক বোমা
বাংলাদেশে মানসিক স্বাস্থ্যকে এখনো বলা হয় “পাগলের চিকিৎসা”,
যার কারণে তরুণরা মুখ বন্ধ রাখে:
- ডিপ্রেশন, এনজাইটি, ট্রমা, অ্যাডিকশন প্রবণতা — এগুলোর কোনো সাইকোলজিক্যাল গাইডলাইন বা সহায়তা নেই
- স্কুল, পরিবার, এমনকি প্রেমিক/প্রেমিকা — সবাই বলে: “চিন্তা কইরো না, ঠিক হইয়া যাবে।”
- আর ঠিক না হলে তরুণ নিজেই নিজের চিকিৎসক হয়ে নেয় ‘গাঁজা’
“মাথার ভেতর যদি আগুন জ্বলে,
ধোঁয়া ছাড়া আর উপায় থাকে?”
৪. পরিবার ও সমাজের নিষ্ঠুর ‘চুপচাপ’ সংস্কৃতি
গাঁজায় জড়িয়ে পড়া তরুণদের একটি বড় অংশ কখনো কাউকে বলতে পারে না:
- বাবা-মা ব্যস্ত, ‘বন্ধু’ হয়ে ওঠে না
- সমাজ শিখায় “মেয়ে খারাপ হয়, ছেলে মাদক খায়”
- তাই ছেলে চুপ করে থাকে, মেয়েরা ভেঙে পড়ে
“আমার বাবা-মা জানতো না আমি ২ বছর ধরে গাঁজা নিচ্ছি।
তারা এখনো ভাবে, আমি ভালো আছি।” — এক কলেজ ছাত্রী
৫. গাঁজা = gateway? নাকি গাঁজা = ঘুরে দাঁড়ানোর একটা চিৎকার?
অনেক গবেষণা বলছে,
গাঁজা সেবন বহুক্ষেত্রে ‘হিরোইন, ইয়াবা, আইস’-এর দিকে নিয়ে যায়।
আবার কেউ কেউ গাঁজা থেকে বেরিয়ে নিজেকে গড়েছে নতুনভাবে।
সত্যি কথা হল:
“গাঁজা কখনো সমাধান ছিল না,
কিন্তু কারো কারো কাছে এটা ছিল শেষ চেষ্টা।”
**শেষ কথা: তরুণরা ধ্বংস হতে চায় না। তারা চায় বোঝা, পাশে থাকা।
যেখানে রাষ্ট্র ব্যর্থ, সমাজ ব্যস্ত — সেখানে তারা গাঁজার ধোঁয়ায় খোঁজে শান্তি।**
[সিরিজ পর্ব ৮ আসছে: “বিকল্পের অভাবে বিকল্প জীবন” — তরুণদের জন্য গাঁজার বদলে বাস্তব সমাধান কোথায়?]